/আত্মপরিভ্রমণ

আত্মপরিভ্রমণ

জন্মগ্রহনের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে যে ভ্রমণ শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা চলমান থাকে। একজন নবজাতক ক্রমেই শিশু হয়ে ওঠে, শিশু কৈশোরে অবতীর্ণ হয়, কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পন করে…এভাবে জীবনের প্রতিটি ধাপে শরীরের সাথে তার মনেরও একধরণের ভ্রমণ চলতে থাকে। অর্থাৎ ভ্রমণ কেবল নিছক কোনো স্থানে যেয়ে স্বশরীরে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠগ্রন্থ ‘মকতুবাত’ বলে ‘আত্মপরিভ্রমণ করো’। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভ্রমণ হলো ‘আত্মপরিভ্রমণ’। অর্থাৎ নিজের অন্তর্জগতে ভ্রমণ করা। আত্মপরিভ্রমণ মানুষকে ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। ‘মানুষ’তো একটি হয়ে উঠবার ব্যাপার। আত্মপরিভ্রমণের নিয়মিত বিভাগে আমাদের প্রথম আয়োজন ‘খড়াব ণড়ঁ উধফ’।

এক ভদ্রলোক তার নতুন গাড়িটি পলিশ করছিলেন তখন তার চারবছর বয়সী পুত্র একখÐ পাথরের টুকরো দিয়ে গাড়ির গায়ে আঁচড় দিচ্ছিল। লোকটি প্রচÐভাবে রেগে গেলেন। রাগের মাথায় বাচ্চার হাত টেনে ধরে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকেন কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন তার হাতে রে ছিল।
প্রচÐ আঘাতে হাড়গুলো ভেঙে যাওয়ায় হাসপাতালে শিশুটিকে তার সব আঙুল হারাতে হয়। তীব্র যন্ত্রণায় কাতর নয়নে তাকিয়ে বাচ্চাটি জিজ্ঞেস করে, বাবা আমার আঙুলগুলো আবার কখন ফিরে পাবো?
ভদ্রলোক খুবই দুঃখিত হলেন। তীব্র কষ্টে ভাষা হারিয়ে ফেললেন। তারপর গাড়ির কাছে ফিরে গিয়ে গাড়িটিতে লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে বসে পড়েন গাড়ির পাশে এবং তার বাচ্চাটি যে আঁকিঝুঁকি করছিল সেটি খেয়াল করেন, যেখানে শিশুটি পাথর দিয়ে আঁকাবাঁকা হাতে লিখে রেখেছে খড়াব ণড়ঁ উধফ (বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি )!
পরেরদিন ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেন।

রাগ এবং ভালোবাসার কোনো সীমা নেই।
জিনিসপত্র হচ্ছে ব্যবহার করার জন্য। আর মানুষ হচ্ছে ভালোবাসবার জন্য।
আজকের পৃথিবীর সমস্যা হলো মানুষ ব্যবহৃত হচ্ছে এবং জিনিসপত্র ভালোবাসা পাচ্ছে!

সাকলায়েন সুলতান