/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

এক ট্রিপে কুতুবদিয়া-কক্সবাজার-মহেশখালী

কুতুবদিয়া দ্বীপ

কুতুবদিয়া (কঁঃঁনফরধ) কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা। নানারকম বৈচিত্র ভরপুর দ্বীপটির আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সমুদ্র সৈকত, লবণ চাষ, বাতিঘর এবং কুতুব আউলিয়া র. এর মাজার।

ধারণা করা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে সাগরের বুকে কুতুবদিয়া দ্বীপ জেগে উঠে। আর এই দ্বীপে মানুষের পদচারণা শুরু হয় প দশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ‘কুতুবুদ্দীন’ নামে এক পরহেজগার দরবেশ ব্যক্তি এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আরাকান থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা যখন এই দ্বীপে আসতে শুরু করে তখন কুতুবুদ্দীন র. তাদেরকে আশ্রয় প্রদান করেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে কুতুবুদ্দীন র. এর নামানুসারে এই দ্বীপের নাম রাখা হয় ‘কুতুবুদ্দীনের দিয়া’ যা পরবর্তীতে ‘কুতুবদিয়া’ নামে পরিচিতি লাভ করে। কুতুবদিয়া দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

কুতুবদিয়া চ্যানেল: মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে যাওয়ার সময় এই চ্যানেলটি পাড়ি দিতে হবে নৌকা করে। সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট।

কুতুব আউলিয়া র. এর দরবার: কুতুব আউলিয়া র. এর দরবার শরীফ দেখতে হলে যেতে হবে দ্বীপের ধুরং এলাকায়। প্রতিবছর ৭ ফাল্গুন শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী র. এর মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে।

বাতিঘর: সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজকে পথ দেখাতে কুতুবদিয়ায় একটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সমুদ্র সৈকত ধরে উত্তর দিকে গেলে বাতিঘর দেখা যাবে। বাতিঘরের পাশেই খুব পরিষ্কার একটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে।

সমুদ্র সৈকত: কুতুবদিয়ায় রয়েছে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দির্ঘ সমুদ্র সৈকত। নির্জন এই সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা খুব কম।

বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র: কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

লবণ চাষ: শীতকালে কুতুবদিয়ায় লবণ চাষ করা হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদন দেখতে হলে চলে আসতে পারেন কুতুবদিয়ায়।

যাতায়াত ব্যবস্থা

আমরা উত্তরা থেকে রাত ৯.৩০ এর এনা বাসে উঠি আর বড়ইতলী নতুন রাস্তার মোড়ে নামি ভোর ৫.৫০ মিনিটে। নাস্তা করে একটা সিএনজি নিয়ে মগনামা ঘাটে চলে যাই। রিজার্ভ ২৫০ টাকা। মগনামা ঘাট থেকে নৌকা দিয়ে চলে যাই বড়ঘোপ ঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। তারপর একটা অটোরিক্সা নিয়ে হোটেলে পৌঁছে যাই জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায়। ওখানকার রাস্তাঘাট চলাচলের জন্য খুবই ভালো।

থাকার জায়গা

পর্যটকদের থাকার জন্য কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ বাজারে হোটেল সমুদ্র বিলাস নামে একটি তিনতলা আবাসিক হোটেল চালু রয়েছে। সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় এই হোটেলে বসে সমুদ্র দেখা যায়। কয়েক ধরনের কক্ষ এখানে ভাড়া পাওয়া যায়। রুম ভাড়া ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। যোগাযোগঃ ০১৮১৯৬৪৭৩৫৫ (আলীম চৌধুরী, স্বত্ত¡াধিকারি)

ভ্রমণ টিপস

কুতুবদিয়া দ্বীপে কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। এখানে জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

একটা অটো ভাড়া করে নিলে কুতুবুদ্দীন র. এর মাজার ছাড়া সবগুলো দর্শনীয়স্থান দেখতে ৩ ঘন্টার মত সময় লাগে। 

আমরা সকাল ৮.৩০ এর দিকে পৌঁছে, হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা অটো নিয়ে ১২.৩০ এর মধ্যে ঘুরে আবার হোটেলে ফিরে এসেছিলাম। ভাড়া নিয়েছিলো ৩৫০ টাকা। আমরা তিনজন বাদে সেসময় আর কোন টুরিস্ট দেখিনি। একানে টুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি নেই। তবে কোস্ট গার্ড আছে।  

দুপুরে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করে ভাবলাম রাতে এখানে থাকার চেয়ে ভাল হবে যদি কক্সবাজার থাকা যায়। সবাই রাজি থাকায় বিকেলের সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে চলে যাই মগনামা ঘাট। আবার রিজার্ভ সি.এন.জি নিয়ে চলে যাই চকরিয়া। চকরিয়া থেকে অনেক বাস পাওয়া যায় কক্সবাজারের। যেকোন বাসে চলে যাওয়া যাবে কক্সবাজার।

কক্সবাজার

কক্সবাজার নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। আমার খুব প্রিয় একটি জায়গা। চকরিয়া থেকে বাসে উঠেই নড়ড়শরহম.পড়স থেকে একটা হোটেল বুকিড করে ফেলি। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে কক্সবাজার পৌঁছে যাই। নেমেই আগে ঢাকা ফেরার টিকেট কাটি এনা কাউন্টার থেকে। তারপর হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে যাই সুগন্ধা বীচে। সেখানে যাওয়ার পথে নানারকম সামুদ্রিক মাছর পদ পাওয়া যায়। এখানকার মাস্ট ট্রাই আইটেম। বার.বি.কিউ এবং ফ্রাই দুইভাবেই মাছ বিক্রি হচ্ছে। বেশ ভালো। রাতে বীচে খানিক্ষণ আড্ডা দিয়ে হোটেলে চলে যাই।

মহেশখালী

সকালবেলা নাস্তা করে ১১ টার দিকে বের হয়ে যাই মহেশখালীর উদ্দেশ্যে। একটা অটো নেই ৬ নম্বর ঘাটের যাওয়ার জন্য। ওখান থেকেই মূলত স্পিড বোট অথবা ট্রলার ছেড়ে যায় মহেশখালীর উদ্দেশ্যে। স্পিড বোটে  যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের মত। কিন্তু ট্রলারে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা। স্পিড বোটের ভাড়া ৭৫ টাকা আর ট্রলারের ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।

মহেশখালীতে পৌঁছে আমরা একটি অটো ভাড়া করিঅ অটোচালক ৩ ঘন্টার মত সময় নিয়ে মহেশখালীর দর্শনীয় জায়গাগুলো আমাদের দেখায়। সরকারিভাবে অটোভাড়া নির্ধারন করা ছিলো কিন্তু ওরা তা ছিড়ে ফেলেছে। আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলো ৫০০ টাকা।

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। তাই আমরা প্রথমে চলে যাই দ্বীপের মৈনাক পর্বতের উপরে আদিনাথ মন্দির দেখতে। এই পাহাড়ের উপর থেকে সম্পুর্ণ মহেশখালী দেখা যায়। এখানকার ডাব খুব মজা এবং দাম তুলনামূলক কম। আদিনাথ মন্দিরের সামনে ভাল ডাব পাওয়া যায়। আমরা আরও দেখেছিলাম শুটিং ব্রীজ, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির। চলতি পথেই দেখা যায় পানের বরজ আর লবণের মাঠ। মহেশখালীর পানের সুনাম সারা বাংলাদেশব্যাপি, তাই পান খাওয়া যেতেই পারে এখানে গেলে। ৩ টার দিকে রওনা দিয়ে চলে আসি ৬ নং ঘাট। কক্সবাজারের রেস্টুরেন্টে এবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পালা। অটো নিয়ে চলে যাই ঝাওবন রেস্টুরেন্টে।

খাওয়া শেষে সূর্যাস্ত দেখার জন্য চলে যাই কলাতলী বীচে। ৭ টা পর্যন্ত বীচে বসে থাকি কারন আমাদের বাস ছিলো ৭.৩০ মিনিটে। বাস যথারীতি ৭.৩০ মিনিটে ছাড়ে এবং আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: 

ভ্রমণে পরিবেশ নোংরা করবেন না, আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের শহর, গ্রাম কে পরিচ্ছন্ন রাখতে!

মো: মারূফুল ইসলাম