/খড়াব রহ ঝৎরষধহশধ

খড়াব রহ ঝৎরষধহশধ

ভূ-পর্যটক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল

মানুষ চলমান। স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। আনন্দে বা নিরানন্দে। কখনো বা সন্ধানে। কিসের মোহে কে জানে! হয়তো নিজেকে চিনতে, ফিরে ফিরে দেখতে। সেই কথা মানুষ শোনাচ্ছে। সেই কথাই ভ্রমণ কথা বা ভ্রমণকাহিনী।

একটি দেশের উপর নানা জাতির উপনিবেশিক শাসনকাল, জাতিগত গৃহযুদ্ধ তারপরও শিক্ষা-দীক্ষায় অর্থনৈতিকউন্নয়ন, পরিকল্পিত নগরউন্নয়ন সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা। এখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর দেশ। ভারত ভূ-খন্ডের দক্ষিণ তটরেখা থেকে মাত্র ৩৩ কি.মি. দূরে ভারত মহাসাগরের বুকে ২১.২ মিলিয়ন অধ্যুষিত ৬৬ হাজার বর্গ কি.মি. আয়তনের দ্বীপদেশ সিং-হল বা শ্রীলঙ্কা। 

প্রয়োজনের তাগিদে অনেকবার রাজধানী পরিবর্তন করতে হয়েছে। বর্তমান রাজধানী কলম্বো। কলম্বো গড়ে উঠেছে পরিকল্পিত উপায়ে। আধুনিক ও মেট্রোপলিটন শহরের গুণাবলী তার মাঝে বিদ্যমান। পুরো দেশেই সবুজের সমারেহে। পৃথিবীর খুব কম দেশের রাজধানীতে এত গাছ, যেটা রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। বিস্তর মাঠ। নির্মল বাতাস। পরিবেশ দূষণের মাতা কোনো কিছু চোখে পড়েনা। নেই গাড়ির হর্ণ, তেমনি নেই কালো ধোঁয়ার প্রস্রবণ। নেই কোন কোলাহল, কথা-বার্তায় তেমন উচ্ছাস নেই। খুবই সংযমী। লোকজনকে ধূমপান করতে দেখিনি। ধূমপায়ীদের সংখ্যা নগণ্য এবং যত্রতত্র ধূমপান করেননা। যদিও সিগারেটের দাম বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ। 

সারা বছরই শ্রীলংঙ্কার আবহাওয়া একইরকম। শীত নেই বললেই চলে। গরমের ভাগ বেশি। আমাদের দেশে যখন শীতকাল তখনও সেখানে গরম। ডিসেম্বরর মাসে প্রচুর আম দেখলাম। দামও বেশি নয়। আমি কলম্বো ৪ ও  কলম্বো ৬ এই এলাকায় অরৎনহন এর মাধ্যমে ছিলাম। অরৎনহন বর্তমানে জনপ্রিয়। ড়হষরহব-এর মাধ্যমে এখানে থাকার বুকিং করতে হয়। এটি একটি আবাসিক এপার্টমেন্ট। হাউজিং সার্ভিস। যেখানে আপনি কিচেন সুবিধা পাবেন এবং চাইলে নিজেরা রান্নাবান্না করতে পারবেন। 

কলম্বোর এধষষব রোড ব্যস্ততম ও বাণিজ্যিক রোড। এই গ্যল রোডের পাশেই রয়েছে মেরিন ড্রাইভ রোড যার পাশ থেকে সহজেই সমুদ্রদর্শন করা যায়। ট্রেন লাইন রয়েছে সমুদ্রতীর ঘেষে। সকালবিকাল  এখানে জগিং, হাটাহাটি করে থাকেন স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন। কলম্বোর বেশির ভাগ রাস্তাই ওয়ান-ওয়ান। বাস ভাড়া খুবই কম। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসও রয়েছে, যা পাবলিক পরিবহন হিসাবে ও ব্যবহুত হয়। এছাড়া ও আমাদের দেশের মতন ট্যাক্সি ও সিএনজিতে উঠে আপনি যেখানে যেতে চান সেখানে তারা নিয়ে যাবে এবং মিটারেই যাবে। বাড়তি ভাড়া আমাদের মতো দাবী করে না। 

কলম্বোর আয়তন মাত্র ৪০ বর্গ কি.মি.। ঢাকার তুলনায় অনেক ছোট। লোক সংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন। প্রতি বর্গ মাইলে ৮২৪ জন লোক বসবাস করেন। রাস্তায় প্রচুর গাছ-গাছালি থাকায় স্বল্প দূরত্ব হেঁটে ও যাওয়া যায়। হাটার বিকল্প নেই। হাটার মাধ্যমেই একটি শহরের অনেক কিছু চেনা-জানা যায়। হাটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও বটে। তবে দিনদিন আমরা হাটার অভ্যাস ভুলতে বসেছি। বাড়িঘর বা এপার্টমেন্টে লিফ্টের ব্যবহারের কারণে দিন দিন অলস বা পরিশ্রমবিমুখ হয়ে যাচ্ছি। 

কিছু দিন পূর্বেও ঢাকা থেকে শ্রীলঙ্কা যেতে সরাসরি বিমান ছিল না। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত-এসব দেশের কোন একটি দেশ হয়ে যেতে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই। গত বছর (২০১৬) থেকে ঢাকা-কলম্বোর সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস। সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টা। ঢাকার অবস্থিত শ্রীলঙ্কান দূতাবাস থেকে শ্রীলঙ্কার ভিসা নেওয়া যায় অথবা অনলাইনে শ্রীলঙ্কার-ই-ভিসা নেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নিতে হবে এবং খরচ হয় মাত্র $ ২০ ডলার। 

বিদেশ যাবার পর প্রথমেই যে কাজটি করতে হয় তা হচ্ছে ডলার ভাঙ্গানো, সীম কার্ড কেনা ও এয়ারপোর্ট থেকে ট্যুরিস্ট তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রয়োজনীয় ম্যাপ, গাইড, ব্রুশিয়ার ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা। তবে এয়ারপোর্টে ডলারের রেট কম থাকে, তাই প্রয়োজনীয় পরিমান ডলার ভাঙ্গানোই শ্রেয়। মোবাইল সীম কার্ডের দামও বেশি থাকে। জরুরি প্রয়োজন না হলে সীম কার্ড না কেনাই উত্তম।  

এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যাবার জন্য ট্যাক্সি সার্ভিস রয়েছে। এয়ারপোর্টের ভেতর নানা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর ট্যাক্সি সার্ভিস রয়েছে। তবে দরদাম করে বা চেক করে ভাড়া জেনে নেবেন। এয়ারপোর্ট থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ৩৩ কি.মি.। গাড়িতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে। কধহমধৎড়ড় ঈধনং খুব জনপ্রিয়। তবে ব্যাকপ্যাকারসদের জন্য রয়েছে খুব কম খরচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস যা এয়ারপোর্ট থেকে (বাস নাম্বার ১৮৭-ঊ৩) কলম্বো সেন্ট্রাল স্টেশনে যাতায়াত করে। 

আমি ঢাকা থেকে সরাসরি শ্রীলংঙ্কান এয়ারলাইনসে কলম্বো যাই। এয়ারপোর্টে তেমন কোন চাকচিক্য বা জৌলুস নেই। রয়েছে আন্তরিক ব্যবহার। খুব সহজেই ইমিগ্রেশন পার হয়ে ব্যাগেজ সংগ্রহ করলাম। দেখলাম বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট টিমও এসেছে একই বিমানে। শ্রীলংঙ্কাতে তাদের ম্যাচ রয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সিতে করে পূর্ব নির্ধারিত অরৎনহন কর্তৃক হোটেলে এলাম যা কলম্বো-৪ এ অবস্থিত। রুমের  ভেতর ফ্রিজ, কিচেন সুবিধা রয়েছে। হাড়িপাতিল, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে রুম নেবার সময় এ/সি’র মিটার রিডিং নিল এবং জানালো এ/সি ব্যবহার করলে মিটার অনুযায়ী অতিরিক্ত পয়সা দিতে হবে। 

পাশেই একটি মন্দির দেখতে পেলাম। গ্যল রোডের রাস্তায় লোকজনের সমাগম, দোকানপাট রয়েছে। ডলার ভাঙ্গালাম। ১ ডলারে ১৫০ শ্রীলঙ্কান রুপী পাওয়া গেল। সীম কিনলাম উরধষড়ম কোম্পানির। এটি এখানে জনপ্রিয়। 

শ্রীলঙ্কানরা খাবারে নারিকেল তেল ব্যবহার করে। তাই ঢাকা থেকেই প্রয়োজনীয় খাবার, রান্না করা মাংস, ভর্তা ইত্যাদি নিয়ে এসেছিলাম। জীবনে এই প্রথম রান্না করা খাবার নিয়ে ঘুরতে গেলাম। ঠেকায় পড়লে কিনা করতে হয়। 

ডিসেম্বর মাস। কিন্তু শীতের  কোনো লক্ষণ নেই। বেশ গরম। প্রায়ই বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। যদিও শ্রীলঙ্কাতে ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এসময় প্রচুর পর্যটকের সমাগম লক্ষ্য করার মতো। তবে ঊধংঃ ঈড়ধংঃ  ভ্রমণের জন্য উত্তম সময় হচ্ছে মে থেকে সেপ্টেম্বর। 

শ্রীলঙ্কার সবাই কমবেশী ইংরেজি বলতে পারে।  শিক্ষিতের হার শতকরা ৯২, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। তবে বাংলাদেশে ৫০০ এর অধিক শ্রীলঙ্কান ছাত্রছাত্রী রয়েছেন যারা মেডিকেলে বাংলাদেশে পড়াশুনা করছেন এবং প্রচুর পরিমাণ দক্ষ গামের্ন্টস কর্মী বাংলাদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। 

শ্রীলঙ্কাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। গ্রীকরা ডাকতেন তাপ্রবানা (ঞধঢ়ৎড়নধহধ) আরবরা ডাকতেন সেরেনদিপ (ঝবৎবহফরন) পর্তুগীজরা ডাকতেন “সিলাও”। এই সিলাও পর্তুগীজ শব্দটি ইংরেজদের কাছে গিয়ে “সিলোন” (ঈবুষড়হ) হয়ে যায় এবং ১৯৪৮ সালে “ডিমিনিয়ন অব সিলোন” নামে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করেন। 

হাজার বছরের পুরানো রামায়নে এর নাম লেখা আছে লংকাভূমি (লংকাদ্বীপ)। শ্রীলঙ্কা সংস্কৃত শব্দ। “শ্রী” মানে দৃষ্টিনন্দন সুন্দর। আর লংকা মানে দ্বীপ। 

প্রথমে পর্তুগীজ এবং তার ১০০ বছর পর ডাচরা এসে ব্যবসাবাণিজ্য এবং ক্ষমতা দখলের কাজ খুব দ্রুত করে নেয়। এরপর, সর্বশেষ বিদেশি বেনিয়া হিসাবে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঘাটি গড়ে তোলে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। আর ব্রিটিশদের উদ্যোগেই চা চাষ করা হয়। তৈরি হয় বিখ্যাত সিলোন টি। বর্তমানে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশ এবং ২য় বৃহত্তম চা রপ্তানীকারক দেশ। যারা পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ চা রপ্তানী করছে। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশরা চীন থেকে চা গাছ এনে প্রথমে নন কর্মাশিয়াল ভাবে জড়ুধষ ইড়ঃধহরপধষ এধৎফবহ-এ চারা লাগান।

সারা পৃথিবীতে চা উৎপাদনকারী প্রথম ১০টি দেশ হচ্ছে ঃ চায়না (১০,০০,১৩০ টন); ভারত (৯,০০,০৯৪ টন) কেনিয়া (৩০,৩,৩০৮ টন): শ্রীলঙ্কা (২,৯৫,৮৩০ টন); তুরস্ক (১,৭৪,৯৩২ টন); ইন্দোনেশিয়া (১,৫৭,৩৮৮ টন); ভিয়েতনাম (১,১৬,৭৮০ টন); জাপান (৮৮,৯০০ টন); ইরান (৮৩,৯৯০ টন);  আর্জেন্টিনা (৬৯,৯২৪ টন)। বাংলাদেশে ৬৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। 

৮ থেকে ১১ আগষ্ট, ২০১৭ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঈড়ষড়সনড় ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞবধ ঈড়হহবপঃরড়হ। আগামী বছরের জুনে আমেরিকার লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হবে ডড়ৎষফ ঞবধ বীঢ়ড়। 

শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় চা কোম্পানীগুলোর মধ্যে রয়েছে উরষসধ, গষবংহধ, খরঢ়ঃড়হ, তবংঃধ, ঈবুষড়হঃধ ইত্যাদি। এই চা কেনার জন্য আপনি কলম্বোর যে কোন বড় শপিংমল, খধশংধষধ, ইধৎবভড়ড়ঃ অথবা ঘঁধিৎধ ঊষরংধ’ং চা ফ্যাক্টরি থেকে কিনতে পারবেন। 

সারা পৃথিবীতে ৫০টির ও বেশি দেশে চা উৎপাদন হয়। ডিসেম্বর মাস বলে শীতের কাপড় নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু মজার ব্যাপার তা ব্যবহার করতে হয়নি। শ্রীলঙ্কাতে সবসময় সুতি কাপড় নিয়ে আসা উচিত। আর ভ্রমণে লাগেজ যত কম হবে, ভ্রমণ ততো আনন্দময়। 

আমি যেখানেই যাই, চেষ্টা করি সেই দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের আগমন, ভিন্ন রকম জাদুঘর স্থাপনা সেই দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কার্যক্রম সম্পর্কে জানার। 

আমি চে গুয়েভারা’র একজন ভক্ত। নেট ঘেটে জানতে পারি কলম্বো ৬-এ চে গুয়েভারার একজন ভক্ত ঈধভব ঈযব নামে একটি রেষ্টুরেন্ট খুলেছেন ঝঃৎধঃভড়ৎফ আবহঁব তে। যা কলম্বো ৬ এলাকায় পড়েছে। সেখানে যাবার পর মনে হল রেষ্টুরেন্টের চেয়ে এটাকে চে জাদুঘর বলা বেশি সমীচিন। রেষ্টুরেন্টে কোন কাষ্টমার ছিলনা। কর্মরত লোকদের সহযোগিতা ছিল বেশ আন্তরিক। তারা আমাকে রেষ্টুরেন্ট সংরক্ষিত চে’র ছবি দেখালো। চে’র এত ছবি খোদ আর্জেন্টিনাতেও দেখিনি। শ্রীলঙ্কা’র সাথে কিউবার খুব ভাল সম্পর্ক। ফিদেল কাষ্ট্রো ১৯৬৯ সালে ক্ষমতা দখলের পর কিউবার সাথে যে সমস্ত দেশের কূর্টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাদের মধ্যে শ্রীলংঙ্কা অন্যতম প্রধান দেশ। যদিও ফিদেল কাষ্ট্রো কখনো শ্রীলঙ্কা আসার সুযোগ করে নিতে পারেননি, তাই তিনি তার বন্ধু চে গুয়েভারাকে শ্রীলঙ্কা সফরে পাঠান ৭ই আগষ্ট ১৯৬৯ সালে। তখন তিনি কিউবার শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। চে গুয়েভারা ঐড়ৎধহধ’র ুধযধষধ শবষব ৎঁননবৎ বংঃধঃব-এ নিজ হাতে একটি রাবারগাছ রোপন করেন। 

আমরা যেমন ঋ.জ. শযধহ কে নিয়ে গর্ব করি, ঠিক তেমনি শ্রীলঙ্কান বিস্ময়কর স্থপতি হচ্ছেন জেফরি বাওয়া (২৩ জুলাই ১৯১৯-২৭ মে ২০০৩)। তার বাবা ছিলেন বেশ ধনী ও সফল আইনজীবি। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং ঝঃ. ঈধঃযধৎরহবং’ং ঈড়ষষবমব, ঈধসনৎরফমব থেকে ১৯৩৮ সালে ইংরেজি সাহিত্য ও আইনের উপর ডিগ্রী নেবার পর ইংল্যান্ডে কিছুদিন প্র্যাকটিসও করেছেন। কিন্ত হঠাৎ করেই তিনি ঠিক করলেন, তাকে স্থপতি হতে হবে। অৎপযরঃবপঃঁৎধষ অংংড়পরধঃরড়হ ঝপযড়ড়ষ ড়ভ অৎপযরঃবপঃঁৎব  এ ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে  ঐব ইবপধসব ধহ অংংড়পরধঃব ড়ভ ঃযব জড়ুধষ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ ইৎরঃরংয অৎপযরঃবপঃং। বাবা-মা মারা যাবার পর ইংল্যান্ড ও ইটালীর সম্পত্তি সব বিক্রি করে ফেরত আসেন শ্রীলঙ্কায়। 

শ্রীলঙ্কায় এসে এক নতুন ধরনের স্থাপত্যরীতির সূচনা করেন। এই রীতর মধ্যে ছিল শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্য এবং পরিবেশকে সম্পর্কিত করে ভিন্নধর্মী একটি স্থাপত্যধারাকে তুলে ধরা। জেফরি বাওয়া শ্রীলংঙ্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক দেশমান্য পদকে ভূষিত হন। 

একদিন আলফ্রেড হাউজ রোডে গ্যালারি ক্যাফেতে যাই, যেটি জেফরি বাওয়ার হাতের ছোয়ায় সামান্য ক্যাফেকে অসামান্য করে তুলেছেন। ক্যাফের ভেতর সুভ্যেনির শপ রয়েছে, যেখানে জেফরি বাওয়ার বিভিন্ন বই ও নানারকম শ্রীলঙ্কান সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।  জেফরি বাওয়ার উল্লেখযোগ্য কাজ শ্রীলঙ্কায় যেগুলো রয়েছে তা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্ট, কান্দালামা হোটেল, রুহুনা বিশ্ববিদ্যালয়, বেনটোটাতে তার বাড়ির কাজ (খঁহঁমধহমধ), হিলটন হোটেল, গ্র্যান্ড ওরিয়েন্টাল হোটেল (ঞধঢ়ৎড়নধহব ঐড়ঃবষ), বেনটোনা বীচ হোটেল, ইয়ালা বীচ হোটেল, ইত্যাদি। এছাড়াও দেশের বাইরে রয়েছে পন্ডিচেরী হোটেল, ভারত, ক্যান্ডোলাইন হোটেল (এড়ধ), পানামা হোটেল (পানামা), উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের এমন কিছু নামকরা বা বিখ্যাত স্থপতি রয়েছেন যাদের কাজ দেখার জন্য সেসব দেশ ভ্রমণ করা যায়। ব্রাজিলের অস্কার নেইমার আমার তেমনই একজন প্রিয় স্থপতি। আধুনিক ব্রাসিলিয়াকে যিনি সাজিয়েছেন অনন্যরূপে। 

এই উপমহাদেশে বর্তমানে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয় খেলা। একটা সময় ছিল যখন ফুটবলই ছিল সবার প্রিয়। এখনও মনে আছে বাংলাদেশে ফুটবল খেলতেন শ্রীলঙ্কার পাকির আলি, প্রেমলাল। তবে শ্রীলঙ্কা জাতীয় খেলা হচ্ছে ভলিবল। ফেব্রুয়ারী ২০১৭ তে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কায় যায় টেষ্ট ম্যাচ টি-২০ খেলার জন্য। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল খেলার পূর্বে প্রেস কনফারেন্সে থাকার। কলম্বোর তাই হোটেলে প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই প্রেস কনফারেন্সে তখন কোন বাংলাদেশি সাংবাদিক ছিলেন না! তবে শ’খানেক শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক ছিলেন। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম, কোচ চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহ, খালেদ মাসুদ সুজন এদের সাথে দেখা ও কথা হল। প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি হতে তুলে প্রশ্ন করলাম মুশফিককে, বর্তমানে ক্রিকেট কোচ ও ফিজিও দু’জনই শ্রীলঙ্কান, তাই তারা মানসিকভাবে বাড়তি মনোবলে আছেন কিনা? মুশফিক হেসে উত্তর দিলেন, অবশ্যই এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে। শ্রীলঙ্কার দলপতি জধহমধহধ ঐবৎধঃয  এর সাথে ছবি তুললাম। প্রেস কনফারেন্স শেষে খুব ভালোরকম শ্রীলঙ্কান খাবারের আয়োজন ছিল। 

শ্রীলঙ্কান অনেক খেলোয়াড়ের খেলা আমাদের কাছে প্রিয় বা তাদের অনেক ভক্ত আছেন বাংলাদেশে এদের মধ্যে অর্জুনা রানাতুঙ্গা  যার নেতৃত্বে ৯৬ সালে শ্রীলংঙ্কা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন।  সনাথ জয়সুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্ডা ভাস, লাসিথ মালিঙ্গা উল্লেখযোগ্য। শ্রীলঙ্কা প্রথম টেষ্ট স্ট্যাটাস পায় ১৯৮২ সালে। 

বিখ্যাত মরক্কান পর্যটক ইবনে বতুতা’র কথা আমরা সবাই জানি। যিনি প্রায় দীর্ঘ ৩০ বৎসর ধরে ভ্রমণ করেছিলেন উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চায়না। মজার বিষয় সাহারা মরুভূমি পাড়ি দেবার সময় তার গাইড ছিলেন একজন অন্ধ ব্যক্তি। জানা যায়। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ওরফে আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ (১৩০৪-১৩৭৭) শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন এবং শ্রীলঙ্কার নানা জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ করে এডামস্ পীকের চূড়ায় উঠেছিলে, জাফনার রাজার আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলেন। এধষষব খরঃবৎধৎু ঋবংঃরাধষ- এ যাবার সৌভাগ্য হয় এবং সেখানে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের নানা দেশের বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, নাট্যকার, পাবলিশার সবার সাথে পরিচয় হয়। সেই অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী  রানিল বিক্রমাসিঙ্গের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়। সেখানেই জানতে পারলাম আমেনা হোসাইনের কথা, যিনি একজন শ্রীলঙ্কান লেখিকা। বর্তমানে ইবনে বতুতার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ নিয়ে একটি উপন্যাস লিখছেন। আমেনার স্বামী-ঝধস চবৎবৎধ’র সাথে তাদের একটি পাবলিশিং হাউস রয়েছে। জানালেন শ্রীলঙ্কার এভারেষ্টজয়ী ঔধুধহঃযর কঁৎঁ-টঃঁসঢ়ধষধ এবং  ঔড়যধহহ চবৎরবং বই বের করেছেন তাদের প্রকাশনী থেকে। টেলিফোনে আমার সাথে ঔধুধহঃযরষ  পরিচয় করিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা থেকে ২১ মে ২০১৬ তে এভারেস্ট সামিট করেন ৩৭ বছর বয়সে। সে জয়ন্তী একজন সাংবাদিক ও নারী অধিকার কর্মী বা এক্টিভিস্ট। জাপানের ঔঁহশশড় ঞধনবর ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি ১৯৭৫ সালে এভারেস্ট সামিট করেন। বাংলাদেশের নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিন সামিট সম্পন্ন করেন।

আমেনা হোসাইন আমাকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে লিখতে বললেন এবং পরবর্তী এধষষব খরঃবৎধৎু ঋবংঃরাধষ যা জানুযারী ২০১৮ তে অনুষ্ঠিত হবে সেখানে আবারও আসার আমন্ত্রণ জানালেন। কলম্বোতে, বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিপ্লোমেট ও লেখিকা মালেকা পারভীন, তিনিও এই ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করেন। 

শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীগিরিয়া, গ্যাল, ক্যান্ডি, মিরিশ্যা, ইয়ালা ন্যাশনাল পার্ক, কলম্বো, অনুরাধাপুরা, নুয়েরা ইলিয়া, বেনটোটা, এডামস পীক ইত্যাদি। 

আমাদের যেমন রয়েছে নোবেলজয়ী প্রফেসর মহম্মদ ইউনুস, ঠিক তেমনি শ্রীলঙ্কারও রয়েছে ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া প্রফেসর মোহন মুনাসিঙ্গে। 

কলম্বোর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে –

১) ঘধঃরড়হধষ গঁংবঁস ২) ওহফবঢ়বহফবহপব গবসড়ৎরধষ ঐধষষ, ৩) এধহমধৎধসধুধ ঞবসঢ়ষব ৪) ইবরৎধ ষধশব ৫) ঙষফ উঁঃপয ঐড়ংঢ়রঃধষ ৬) চবঃঃধয ৭) এধষষব ঋধপব এৎববহ ৮) ইধৎবভড়ড়ঃ ৯) উবযরধিষধ তড়ড় এধৎফবহং ১০) এড়ভভৎবু ইধধি’ং ১১) ঘবষঁস চড়শঁহধ ঞযবমঃৎব  ১২) খধশংধষধ ১৩) অংড় শধৎধসধুধ ১৪) ঔধসর-টষ-অষভধৎ গড়ংয়ঁব ১৫) ঙফবষ ১৬) উরষধসধয ঞবধ ঝযড়ঢ় ১৭) ইবহঃড়ঃধ ইবধপয ১৮) অৎঁমধস ইধু 

পৃথিবীর ৬০টির বেশি জায়গায় আমাদের বাংলাদেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন রয়েছে। এসমস্ত মিশনের বা অফিসারদের অনেকের বিরুদ্ধে অনেকরকম অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু শোনা যায়না বা লেখা হয়না এই সমস্ত মিশনে কর্মরত সৎ, মেধাবী, দেশপ্রেমিক উদ্যোগী, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে। বেঁচে থাকতেই যোগ্যদের সম্মান ও ভালোবাসা জানানো উচিত। আমরা হাটছি, উল্টোপথে। মৃত্যু, হলেই তাকে সম্মান করছি বা তার নামে রাষ্ট্রিয় পদক ঘোষনা করছি। 

রিয়াজ হামিদুল্লাহ একজন দক্ষ, পরিশ্রমী, সৎ ও দেশপ্রেমিক কূটনীতিক। বর্তমানে কলম্বোয় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োজিত। ২১ শে ফ্রেরুয়ারিতে তিনি যে প্রোগ্রাম করলেন তা বাংলাদেশের কোন দূতাবাসই বা অন্য মিশন করতে পারেননি, আমার জানামতে। তিনি আউট অফ দ্যা বক্স চিন্তা করতে পারেন। কাজও করেন বলেই তিনি সবার চেয়ে আলাদা। ভিন্ন প্রকৃতির। শিল্প, সংগীতে অনুরাগী, ছবি তুলতে ও লেখালেখি করতেও ভালবাসেন। তার দক্ষ প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতোন শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসেন জুলাই মাসে এবং বাংলাদেশকে ট্যাক্স ফ্রি কান্ট্রি হিসাবে ঘোষণা দেন। পৃথিবীর কোন দেশই বাংলাদেশকে এখনও পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা দেয়নি। বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানকে ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা দিয়ে থাকে দেশটি। 

আমার এই লেখার মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাব থাকল, যে সমস্ত সরকারী কর্মচারী ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে দেশ ও জাতি লাভবান হচ্ছেন বা দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছেন ‘তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সম্মান প্রদান করা হউক এবং প্রতি বছর বা দুই বছরে একবার ‘শীর্ষ দশ রাষ্ট্রদূত পদক’ ঘোষণা করা হউক। মিশনে আমাদের বাণিজ্যিক, পর্যটন ও কালচার, মিডিয়া ইত্যাদি বিভাগে অতিরিক্ত অফিসার নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। ল্যাটিন আমেরিকার, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, পেরু, সেন্ট্রাল আমেরিকার, পানামা ও কোষ্টারিকায় নতুন দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা এবং আমাদের অফিসারদেরকে বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে স্পেনিশ, পর্তুগিজ, চাইনীজ, আরবী, কোরিয়ান, জাপানীজ, ফরাসী ইত্যাদি ভাষায় দক্ষতাও অর্জন করা উচিত।

লেখক: প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন