পিরোজপুরের নাজিরপুরের বেলুয়া নদীর মোহনায় বসে বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার। যুগ-যুগের পুরনো ভাসমান এ বাজারটি এলাকার কৃষকদের পণ্য বেচাকেনার একমাত্র জায়গা। এটি এক দারুন পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রও।
নামকরণ
নদীর নাম ‘বেলুয়া’ হলেও স্থানীয়রা একে চেনেন ‘বৈঠাকাটা’ নামে। এর নামকরণ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে নানান গল্পকথা। তবে বেশিরভাগ মানুষের মতে, প্রাচীনকালে এখানে বৈঠা দিয়ে মাটি কাটার পর তৈরি হয় ছোট একটি নদী। পরে ভাঙতে ভাঙতে সেই নদী এখনকার রূপ নিয়েছে। আর এভাবেই এসেছে বৈঠাকাটা নামটি।
কৃষিপণ্যের জমজমাট বাজার
বৈঠাকাটা নদীকে ঘিরে বসবাস করেন কয়েক হাজার কৃষিজীবী মানুষ। তাদের উৎপাদিত নানারকম কৃষিপণ্যের বেচাকেনার একমাত্র জায়গা এই বাজার। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার বসে এই বাজার। খুব সকাল থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টার আগেই শেষ হয়ে যায় বেচাকেনা।
নির্ধারিত একটি জায়গা ছাড়া আর কোনো স্থায়ী কাঠামো নেই এ বাজারের। একেকটি নৌকাই এই বাজারের একেকটি দোকান। এটি এক দর্শনীয় বিষয়।
পাইকারি ক্রেতা বেশি
বৈঠাকাটা বাজারে ক্রেতাদের বেশিরভাগই পাইকার। এ বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে কৃষিপণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন তাঁরা। বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে বছরের বিভিন্ন সময়ে সবচেয়ে বেশি সমাগম হয় মৌসুমি সবজি ও ফলমূলের।
গাছের চারা
নাজিরপুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গাছের চারা উৎপাদনের প্রচুর নার্সারি থাকায় এ বাজারে তা বিক্রি করতেও ভীড় জমান কৃষকরা। নাজিরপুর এলাকায় বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয় বলে এ এলাকায় ভাসমান ধাপ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামের চাহিদা বেশি। বৈঠাকাটা বাজারের একটি অংশে কচুরিপনা, শ্যাওলা, জৈব সার ইত্যাদি পাওয়া যায়।
মাছ ধরার সরঞ্জাম
এই এলাকাটি খালবিলে ভরপুর। কৃষিকাজের পাশাপাশি সবাই তাই কমবেশি মাছ ধরেন। বৈঠাকাটা বাজারে তাই পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম মাছ ধরার সরঞ্জামও।
নদী বিধৌত এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও কৃষকদের কাছে এখনও যাতায়াতের জনপ্রিয় মাধ্যম নৌকা। যান্ত্রিক নৌকার প্রচলন থাকলেও এ অঞ্চলের কৃষকরা বৈঠাচালিত নৌকার ব্যবহারই বেশি করেন।
বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার এবং এই অঞ্চলের মানুষের বৈচিত্রময় জীবনধারাকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে পরিকল্পিত আন্তর্জাতিকমানের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এজন্য প্রয়োজন সরকারের ভিশনারি উদ্যোগ। কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পর্যটন সাফল্যলাভের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটি বিবেচনায় নিয়ে চলমান অবস্থাকে উইন্ডো ড্রেসিং মেথডে উদ্যোগ নিলে দক্ষিণাঞ্চলে একটি আকর্ষণীয় জলকেন্দ্রিক পর্যটনের কেন্দ্ররূপে এটি জনপ্রিয়তা পাবে। দেশব্যাপি সুষ্ঠ পর্যটনের জন্য প্রয়োজন ‘টুরিজম বাবল প্লান’ এবং সেখানে এই অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে যথাযথভাবে তুলে ধরা জরুরি। এতে করে বহুমাত্রিক পর্যটনের প্রসার ও বিস্তার ঘটবে, মানুষের অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়ন হবে।
ডিডবিøউ ও ভিজিট থেকে সংকলন: মাহতাব খোকন