/প্রচন্ড গরমের কবলে নবী মুসা আ. এর সম্প্রদায় এবং আমরা

প্রচন্ড গরমের কবলে নবী মুসা আ. এর সম্প্রদায় এবং আমরা



ইমরুল হাফিজ, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ,

পৃথিবীতে বহু মানুষ বিখ্যাত হয়েছেন তাদের ভ্রমণের জন্য। তবে পয়গম্বর মুসা আ. এর ভ্রমণ ছিলো সবচেয়ে বৈচিত্রময়, আকর্ষণীয়, উত্তেজনাকর। তিনি তার সম্প্রদায়কে নিয়ে একাধারে চল্লিশ বছর ভ্রমণ করেছেন। এই ভ্রমণকালীন জীবিকা নির্বাহের কোনো উপায় না থাকায় আসমান থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হতো। যারমধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলো মান্নাসালওয়ার হালুয়া এবং আবাবীল পাখির ভুনা গোশত। নবী মুসার জীবনের অসাধারণ ভ্রমণ ইতিহাসে তাঁর সম্প্রদায়কে নিয়ে প্রচন্ড গরম বা উষ্ণ বা বৃষ্টিহীন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখিও হতে হয়েছিলো। নবী মুসা আ.কে সৃষ্টিকর্তা একটি বিশেষ ‘মুজেজা’ দিয়েছিলেন যার কারণে তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়ে আল্লাহ্ সাথে কথোপকথন করতে পারতেন; এই মর্যাদার কারণে মুসা আ.কে ‘কলিমুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

নবী হযরত মুসা আ. এর সময়কালে একবার দির্ঘসময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছিলো না। প্রচন্ড গরমে প্রকৃতি উত্তপ্ত। তাঁর উম্মতগণ গরমে অতিষ্ঠ। তীব্র গরম যখন তারা আর সহ্য করতে পারছিলেন না তখন সহচরগণ নবী মুসা আ. এর কাছে এসে আকুতি জানালেন, হে আল্লাহ্ নবী, আপনিতো রবের সাথে কথা বলার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। আপনি দয়া করে আল্লাহ্ কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন। এই উত্তপ্ত প্রকৃতি, বৃষ্টিহীন অসহ্য গরম আমরা আর সইতে পারছি না।

পয়গম্বর মুসা আ.  তার অনুসারিদেরকে সাথে নিয়ে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করতে শুরু করলেন। দোয়া করার সাথে সাথে রোদের তীব্রতা বেড়ে গেলো। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলো।

নবী মুসা কলিমুল্লাহ্ অবাক হলেন। তিনি মহান সৃষ্টিকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্! আমি বৃষ্টির জন্য দোয়া করলাম, অথচ আপনি রোদের উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দিলেন!

আল্লাহ্ পক্ষ থেকে জবাব এলো, তোমার এই উপস্থিত জমায়েতে এমন এক ব্যক্তি রয়েছে যে চল্লিশ বছর ধরে আমার অকৃজ্ঞতা করে চলেছে, সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতা করেছে, একটি দিনের জন্যও সে আমার আনুগত্য করেনি। তাঁর কারনেই বৃষ্টিপাত বন্ধ রয়েছে।

নবী মুসা আ. তাঁর সাথে উপস্থিত জমায়েতের দিকে ক্রোধ নয়নে তাকালেন। অচেনা, অজানা সেই অকৃতজ্ঞ লোকটিকে সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যেতে নির্দেশনা দিলেন।

এবার সেই দুষ্ট লোকটি ভয় পেলো। তবে ভীতির চেয়েও সে মহা দুশ্চিন্তায় পড়লো এই ভেবে যে, এখন যদি এই জমায়েত থেকে বের হয়ে যাই, তবে সবার সামনে ‘পাপী’ হিসেবে ভীষণভাবে লজ্জিত হতে হবে। আর যদি বেরিয়ে না গিয়ে উপস্থিত থাকি, তবে বৃষ্টি আসা বন্ধ থাকবে। ভয়াবহ উভসংকট পরিস্থিতিতে নিজের মান-সম্মান বাঁচাতে সে আল্লাহ্ কাছে দোয়া করলো, হে মহান আল্লাহ! চল্লিশ বছর আপনি আমার পাপকে গোপন রেখেছেন, আজকে সবার সামনে দয়া করে আমাকে বেইজ্জতি করবেন না। অসন্মানিত করেন না। আমি আপনার কাছে নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। আপনিই একমাত্র ক্ষমাকারি, আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিন।

সেই ব্যক্তির তওবাসূচক দোয়া শেষ হতে না হতেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

নবী মুসা আ. এবার আরও অবাক হয়ে তাঁর প্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্! এই জমায়েত থেকে কেউতো বের হয়ে যায়নি, তারপরেও আপনি বৃষ্টি দিয়ে দিলেন, এর মাহত্ম কী?

আল্লাহ্ জবাব দিলেন, যার কারণে বৃষ্টি আসা বন্ধ ছিলো, তাঁর কারনেই বৃষ্টি শুরু হলো। আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

চল্লিশ বছরের গুনাহ, পাপ, অকৃতজ্ঞতা কয়েকে সেকেন্ডেই ক্ষমা…বিষয়টি সকলের জন্যই অবাককর ছিলো।

হযরত মুসা আ. এবার লোকটির নাম পরিচয় জানার আগ্রহ ব্যক্ত করলেন। কে সেই লোক যার কারণে বৃষ্টি বন্ধ হলো, প্রচন্ড গরমের কারণ হলো আবার তার কারণেই পুনরায় বৃষ্টি শুরু হলো এবং গরমের উত্তাপ থেকে সকলে মুক্ত হলো। উপস্থিত সকলেই লোকটিকে দেখতে চাইলেন, তার পরিচয় জানতে আগ্রহবোধ করলেন।

তখন আল্লাহ্ বললেন, ঐ লোকটি যখন পাপে ডুবে ছিলো, তখনই আমি কাউকে সেটি জানতে দেইনি, এখন সে অনুতপ্ত হৃদয়ে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে, এখন কী আমি জানাবো? জানাবো না। পাপীগণের পাপ আমি যথাসম্ভব গোপন রাখি, এটা আমার সাথে আমার বান্দার নিজস্ব ব্যাপার।

অথচ আমরা নিজেরা পাপী হয়েও প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে আমাদের বাক্য, আচরণ, কর্মসহ নানাভাবে বহু রকমের অন্যায়, অনাচার, অবিচার..পাপাচার করি, করতেই থাকি..অনুতাপহীনভাবে করেই চলেছি..

মহান ¯্রষ্টা প্রচন্ড গরম এবং উত্তাপ থেকে বাংলাদেশবাসিসহ সারা বিশে^র মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন। শান্তি দান করুন। আমাদের সকল ভুল-ক্রুটি, অন্যায়-পাপগুলো ক্ষমা করে দিন, এই প্রার্থণা করি।

 লেখক: ভ্রমণ পাঠক