/ক্যানবেরার কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনে

ক্যানবেরার কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনে

নার্গিস আক্তার

সিডনিতে আছি ১৫ বছর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি অস্ট্রেলিয়া। সুযোগ পেলেই সেই সৌন্দর্য উপভোগে কসুর করি না। এমনিতে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দ। বিশেষ করে ফুলের প্রদর্শনী, বোটানিক্যাল গার্ডেন এসব জায়গায় বেড়ানো প্রিয় কাজগুলোর একটি।

২০১২ সালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জীবন কুমার চৌধুরী সিডনি আসেন সরকারি সফরে। সফরের ফাঁকে ছুটির দিনে তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। স্বামীসহ আমরা তিনজন ক্যানবেরার কুকিংটন গার্ডেনে বেড়াতে যাই। 

কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনটি ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত। মি. ডাউগ (উড়ঁম) এবং ব্রেন্ডা সারাহ কুকিংটনের (ইৎবহফধ ঝধৎধয ঈড়ড়শরহমঃড়হ) প্রচেষ্টায় কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনের কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে। মি. ডাউগ এবং ব্রেন্ডা সারাহ যুক্তরাজ্যের মিনিয়েচার ভিলেজ (গরহরধঃঁৎব ঠরষষধমব) পরিদর্শনের পর এই গার্ডেন তৈরি করতে উৎসাহী হন। একাধিক এওয়ার্ড প্রাপ্ত গার্ডেনটি সাধারণ জনগণের পরিদর্শনের জন্য খুলে দেয়া হয় ১৯৭৯ সালে। এটি ক্যানবেরার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় বেড়ানোর জায়গা। 

আমাদের বাড়ি সিডনির ক্যাম্বেলটাউন শহরে। এখান থেকে ড্রাইভে ক্যানবেরা যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। ক্যানবেরা থেকে কুকিংটন গার্ডেন পৌঁছাতে আরও ১৫ মিনিট। নাশতা খেয়ে প্রাইভেটকারে রওনা হলাম। পথে বিরতি নিয়ে লা  করায় গার্ডেনে পৌঁছাতে বিকেল তিনটা বেজে গেলো। তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে আমরা গার্ডেনে ঢুকে পড়ি। ভেতরে এসেই মনে হলো যেন একটি স্বপ্নপুরীতে ঢুকে গেলাম, যেনো এক রূপকথার রাজ্য! 

গার্ডেনটি কয়েক ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে  দেখা যাবে ইংলিশ ও বৃটিশ ভিলেজ, ক্রিকেট খেলার মাঠ, নদী, নৌকা, ট্রেন  স্টেশন এবং বৃটিশ আন্তঃশহর ট্রেনের ক্ষুদ্রাকৃতি প্রতিরূপ (গরহরধঃঁৎব) নয়নাভিরাম করে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নানা জাতের ফুলের বাগান এবং ঝাউগাছের সারি। সবকিছুই সাজানো হয়েছে খুব যত্নসহকারে, পরিকল্পিতভাবে। 

গার্ডেনের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রতিবছর ৩৫ হাজার রকমের ফুলের চাষ করা হয় এখানে। ১৫০০০ ক্ষুদ্রাকৃতির মানবমূর্তি, জীবজন্তু এবং পাখির প্রতিকৃতির সমারোহে ফেইরিল্যান্ডের বাস্তব রূপায়ণ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সেকশনে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যের নিদর্শন  (জবঢ়ষরপধ) পরপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ৩০টি দেশের নিদর্শন বর্তমান, আরও নতুন নতুন যোগ হচ্ছে।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

স্কটল্যান্ডের ব্রেইমার ক্যাসল

উক্রাইনের সেন্ট এন্ডরুজ চার্চ

-আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আয়ার্সের রাস্তার দৃশ্য

-গ্রেট বৃটেনের লিনটন এবং লিনমাউথ ক্লিফ রেলওয়ে

-লাহোর গেট, দিল্লির লাল দুর্গ

-ইন্দোনেশিয়ার বড়োবুদুর মন্দির

-সাউথ আফ্রিকার গ্রুট কন্সটানসিয়া চার্চ

-পেরুর মাচু পিচু (গধপযঁ চরপপযঁ)

-মেক্সিকোর টেনোস্তিসিয়ান এনজেক মন্দির এবং আরও অনেক কিছু …

এই গার্ডেনে সব বয়সী মানুষের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। পিকনিক, বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা অন্য যে কোনো পার্টি আয়োজনের সুবিধা রয়েছে এখানে। ট্রেন রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে যেন দর্শকরা ট্রেনে চড়ে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এখানে সময়সূচি মেনে ট্রেন চলাচল করে। তবে হাতে সময় থাকলে হেঁটে দেখাটাই বেশি আনন্দময়। 

ট্রেনের সময়সূচি 

১০টা মি.-১০.৪৫ মি.

১১.৩০ মি.-১২.১৫ মি.

১টা মি.-১.৪৫ মি.

২.৩০ মি.-৩.১৫ মি.

৪ টা মি.-৪.৪৫ মি.

কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনে ক্যাফে রয়েছে। ক্যাফেতে হালকা নাশতা, দপুরের লা  এবং বিকেলে চা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। 

ঠিকানা

ক্যানবেরা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে গোল্ডক্রিক রোডে গার্ডেনটির অবস্থান। ১১ এড়ষফ ঈৎববশ জফ, ঘরপযড়ষষং, অঈঞ ২৯১৩, অঁংঃৎধষরধ, ঢ়য: ০২ ৬২৩০ ২২৭৩, ভৎবব পধষষ ১৮০০ ৬২৭ ২৭৩. ক্যানবেরা শহর থেকে বাসে চড়ে গার্ডেনে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রবেশের সময়সূচি

কুকিংটন গ্রিন গার্ডেন সপ্তাহে সাতদিন  সকাল ৯:৩০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ভেতরে প্রবেশের শেষ সময় সোয়া চারটা। ২৫ এবং ২৬ ডিসেম্বর বছরে দু’দিন বন্ধ থাকে। আবার মঙ্গল এবং বুধবার সপ্তাহে দু’দিন রাতেও খোলা থাকে। তখন দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশের সময় সন্ধ্যা ৬.৩০ মি.-৮.৩০মি.। রাতের বেলা হাজার হাজার লেড লাইটের আলোতে গার্ডেনের সৌন্দর্য বেড়ে গিয়ে এক চোখ ধাঁধানো অপরূপ রাজ্যের রূপ ধারণ করে।

প্রবেশমূল্য

প্রাপ্তবয়স্ক : জনপ্রতি ১৯.৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার

৪-১৬ বছরের বাচ্চাদের জনপ্রতি ১১.৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের কনসেশন রয়েছে যেমন গ্রুপ কনসেশন, সিনিয়র কনসেশন, ফ্যামিলি প্যাকেজ ইত্যাদি। 

কুকিংটন গ্রিন গার্ডেনে বেড়ানোর স্মৃতি আমাকে আজীবন এক ভালোলগার স্বপ্নিল স্পর্শ বুলিয়ে দেবে। গার্ডেনের ছবিগুলো দেখলেই মন ছুটে যায় বারবার সেই স্বপ্নিল রাজ্যের কাছে। মি. ডাউগ এবং ব্রেন্ডা সারাহ কুকিংটনকে ধন্যবাদ এ রকম একটি বিনোদনের জায়গা উপহার দেবার জন্য। 

লেখক: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি