পনিররাজ্য!

ফ্রান্সে এসে প্রথম এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে এক বিটকেল গন্ধ পেয়ে ভদ্রতা বশে কিছুই বলতে পারিনি। খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল, খোলা রান্না ঘরের লাগোয়া বসার ঘর, যতবারই গৃহকর্তা ফ্রিজের দরজা খুলছে বিটকেল গন্ধ নাকে সজোরে ধাক্কা মারছে। কিছুতেই বুঝতে পারছিনা গন্ধটা কিসের। অবশেষে খুবই বিনীতভাবে বললাম, তোমরা কি কোন গন্ধ পাচ্ছ? খুবই স্বাভাবিকভাবে গৃহকর্ত্রী উত্তর দিল- ও, আচ্ছা, চীজের গন্ধ-লে ফোমাজ। ওর স্বভাবই হল ফ্রান্সের বাজারের সমস্ত ধরণের চীজ কিনে এনে স্বাদ নেওয়া। অনেকদিন ফ্রান্সে থেকে এখন আমার চীজের গন্ধ আর নাকে লাগে না। দেখবে তোমরাও অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

তারপর দিন গড়িয়ে গেছে, ফ্রান্সের যে কোন খোলা বাজারে বা সুপার মার্কেটের কোন এক বিশেষ দিকে গেলে সেই বিটকেল গন্ধ পেয়েছি। একটু একটু করে ফ্রান্সের নানা ধরণের চীজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, ফরাসি চীজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, চীজের স্বাদ নিয়েছি, আবার কোন কোন চীজের গন্ধে মুন্ডুও ভরপুর হয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো প্রজাতির চীজ ফরাসি খাদ্য সংস্কৃতির অন্তর্গত। স্থানীয় ফরাসি বাজারে চীজ কিনতে গেলে মাথা খারাপের জোগাড় হয়। ফরাসি ওয়াইন যেমন বিখ্যাত, তেমনি বিখ্যাত ফরাসি চীজ। আবার কোন কোন বিশেষ চীজের সঙ্গে বিশেষ ধরণের ওয়াইন পান করাও সমান বাধ্যতামূলক। ফ্রান্সের অনেক গ্রামে চীজ টুরিজমও আছে। কিভাবে ফরাসিরা চীজ তৈরি করে, চোখের সামনে দেখা যায়।

অনেক ফরাসি বন্ধুর বাড়িতে খাবারের নিমন্ত্রণে গেলে চীজের ফাঁদে পড়তেই হয়েছে। খাবারের শেষে ফরাসিরা সাধারণত ফরাসি ব্রেড, মানে বাগেতের টুকরোর সঙ্গে চীজ পরিবেশন করে, আর সঙ্গে দেয় ওয়াইন। চীজ কাটার বিশেষ ছুরি দিয়ে এক টুকরো চীজ কেটে নিয়ে, মুখে দিয়ে এক চুমুক ওয়াইন পান করলে ওয়াইনের স্বাদ নাকি আরও বেড়ে যায়। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের চীজ খাওয়ার নানা ফরাসি সূত্র আছে, মনে হয় শুধু ফরাসিরাই সেই সূত্রের খবর রাখে।

ফরাসি চীজ সাধারণত সাদা, হালকা কমলা ও ঘিয়ে রঙের হয়। কিন্তু, গরুর দুধ থেকে তৈরি এক ধরণের সবুজ ছত্রাকযুক্ত চীজের প্রেমে ফরাসিরা মাতোয়ারা- Roquefort চীজ। ছত্রাকময় গন্ধের চীজটি খেতে কিন্তু মন্দ লাগে না। স্যালাডের উপরে ছড়িয়ে দিয়ে বা শুধু ব্রেড ও ওয়াইনের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় এই চীজ।

ফ্রান্সের প্রত্যেক এলাকার এক একটি নিজস্ব চীজ আছে, আবার নানা জায়গার নানা ধরণের ফরাসি চীজের নানান নাম। গরু, ভেড়া ও ছাগলের দুধ থেকে তৈরি নানা প্রজাতির প্রত্যেকটা ফরাসি চীজের স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। তাই, ফ্রান্সে কিছুদিন বসবাস করলে অল্প সময়ের মধ্যেই নানা ফরাসি চীজের স্বাদে, রসনায় ডুবে যায় সবাই।

সুদিপ্ত রায়, ফ্রান্স থেকে

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!