দিনটি যখন এন্টিক

Antique goods are not just old articles, but articles that revive our old memories and we take a trip down the memory lane . . .

নভেম্বরের শুরু। শীতের শুরু। গাছেদের পাতা ঝরার বেলা। তুলুসের সব গাছ যেন রঙের নেশায় মেতেছে। François-Verdier পার্কের সামনের যে সারি বাঁধা গাছের রাস্তা চলে গেছে শহরের দিকে, সেখানকার গাছেরাও শীতের শুরুতে শুকনো পাতা ঝরিয়ে দিয়েছে। শীতের শুরুতে এই জায়গায় যেন এক উদাসীনতা ছুঁয়ে থাকে। সেখানে প্রতি মাসের প্রথম শুক্র থেকে রোববার এই উদাসীনতার সঙ্গে মানানসই এক এন্টিক বাজার বসে। ইউরোপের এক পুরনো ছবি ফুটে ওঠে এই এন্টিক বাজারের জিনিসপত্রে। এই বাজারের আবহাওয়ায় কেমন অদ্ভুত এক স্মৃতিমধুর সুবাস ভাসে।

ছুটির দিনে অনেকেই এই এন্টিক বাজারে অতীতের স্মৃতি খুঁজে ফেরে অনেক পুরনো জিনিসের ভিড়ে। এন্টিক মানে তো শুধুই পুরনো জিনিস নয়, এক পুরনো স্মৃতি। এন্টিক বাজারে অনেক পুরনো জিনিসের ভিড়ে হঠাৎ এক সাদাকালো ক্যামেরার চামড়ার খাপ দেখে মনে পড়ে যায় বাবার কাছেও এমনি এক ক্যামেরা ছিল, খাপটি ছিল খয়েরি চামড়ার। এই বাজারের পুরনো জিনিসে যেন খুঁজে ফিরি নিজের সেই পুরনো মানুষগুলোকে, যারা বহুদিন আগেই চলে গেছেন।

কিংবা এখানের এই বাজারে কেউ খুঁজে ফেরে অনামি শিল্পীর আঁকা কোনো এক বহু মূল্য ছবি বা পুরনো কোনো এক চিঠি যার কোনায় সাঁটানো কোনো এক দুর্মূল্য স্ট্যাম্প। কত অলীক কল্পনা বা স্বপ্ন নিয়েই না মানুষের অদ্ভুত মনোজগৎ গড়ে ওঠে। আর সেই মনের অলীক ছোট ছোট স্বপ্নে ইন্ধন জোগায় এই এন্টিক মার্কেট।

পুরনো ছবি, বই, আসবাবপত্র, কাপ, ঝাড়লণ্ঠন, মোমদানি, কেটলি, হারিকেন, পুরনো ক্যামেরাÑ কী নেই এই আন্টিক বাজারে। আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতীতের যা যা লুপ্ত তা সবই পাওয়া যায় এই এন্টিক বাজারে।

এই হাটে যারা বিক্রি করতে আসেন, তাদেরও অনেকটা এন্টিকের মতোই মনে হয়। প্রত্যেক বিক্রেতার যেন এক নিজস্ব গল্প আছে, নিজস্ব চরিত্র আছে। প্রত্যেকেরই যেন নিজের তৈরি এক এন্টিক দুনিয়া আছে। পুরনো জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বোধহয় প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু থাকে। কোনো কোনো জিনিস দেখে কেমন এক নস্টালজিক আবেশ ঘিরে ধরে। এখানের বাতাস বোহেমিয়ান, পরিবেশ নস্টালজিক।

এখানের বিক্রেতারা জিনিস বিক্রি করার চেয়েও যেন পুরনো জিনিসের মায়ায় বাধা পড়ে গেছে, যেন ওরা এক অদ্ভুত স্বপ্নজগতে বাস করে। ধাবমান সময়ের সঙ্গে লড়াই করে অতীতের দিকে মুখ ফিরিয়ে উজান শ্রোতে সাঁতার কাটছে। কেউ ওদের জিনিস কিনছে কি-না সে নিয়ে বিন্দুমাত্র ভ্রƒক্ষেপ নেই। শনিবারের দুপুরে দলবেঁধে রেড ওয়াইন, শ্যাম্পেন দিয়ে লাঞ্চ করতেই ব্যস্ত দোকানিরা।

দক্ষিণ ফ্রান্সে শীতের ঝরা পাতার প্রেক্ষাপটে এন্টিক বাজারের প্রতিটি জিনিস এক মোহময় ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। ক্যামেরা থেকে যে চোখ সরাতেই পারি না।

ফাহমিদা হালদার জয়িতা, ফ্রান্স থেকে

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!