বিশ্বসেরা ১০ উড়োজাহাজের তালিকায় স্থান পেতে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের নতুন পরিকল্পনা

মালয়েশিয়া এভিয়েশন গ্রুপ (MAG) ২০৩০ সালের মধ্যে স্কাইট্র্যাক্সের বিশ্বসেরা ১০ এয়ারলাইন্সের তালিকায় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সকে নিয়ে যেতে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাঁচ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ উন্মোচন করেছে। পুনর্গঠন-পরবর্তী পুনরুদ্ধার পর্ব থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ সম্প্রসারণে প্রবেশের এ উদ্যোগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

‘কুয়ালালামপুর মালয়েশিয়া এভিয়েশন গ্রুপের পক্ষ থেকে ‘লং-টার্ম বিজনেস প্ল্যান ৩.০’ নামে পরিচিত এই কৌশলগত পরিকল্পনাটি সম্প্রতি পেতালিং জায়ায় এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থাপন করা হয়। ২০২৬-২০৩০ সময়কালের জন্য এতে সুস্পষ্ট কর্মক্ষমতা, বহর (ফ্লিট) ও রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অপারেশনাল পুনরুদ্ধারকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড স্বীকৃতিতে রূপান্তর করার পাশাপাশি আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব হিসেবে মালয়েশিয়ার অবস্থান আরও শক্তিশালী করাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

কৌশলগত দিকনির্দেশনা

‘লং-টার্ম বিজনেস প্ল্যান ৩.০’ মালয়েশিয়া এভিয়েশন গ্রুপের জন্য একটি কৌশলগত মোড়, যা ২০২০ সালে সম্পন্ন হওয়া পুনর্গঠনের পর এমন উদ্যোগ নেয়া হলো, যেখানে ১৫ বিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি দায় এবং ১০ বিলিয়ন রিঙ্গিতের বকেয়া ঋণ অপসারণ করা হয়।

গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাতুক ক্যাপ্টেন ইজহাম ইসমাইল জানান, স্থিতিশীলতা পর্ব অতিক্রম করে এখন আর্থিক শৃঙ্খলার ভিত্তিতে পরিমিত ও স্কেলড প্রবৃদ্ধির জন্য গ্রুপটি প্রস্তুত।

পূর্ববর্তী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা চালুর পর থেকে গ্রুপটি টানা তিন বছর অপারেটিং মুনাফা এবং টানা দুই বছর কর-পরবর্তী নেট আয় অর্জন করেছে।

গ্রাহক সন্তুষ্টিতেও উন্নতি হয়েছে। গ্রুপের কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশন ইনডেক্স এ বছর এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালে ছিল ৮০ শতাংশ।

বহর ও নেটওয়ার্ক

বহর আধুনিকায়ন এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু, যা সেবার মান ও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ উভয়কেই সহায়তা করবে। গত পাঁচ বছরে ২২টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ যুক্ত করেছে গ্রুপটি এবং নতুন আসিয়ান রুট চালু ও পোর্টফোলিওর ভেতরে অপারেশনাল পুনর্গঠনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়িয়েছে। আগামী দিনে ৪০টি এয়ারবাস A330 neo, ৪৩টি বোয়িং ৭৩৭-৮ এবং ১২টি বোয়িং ৭৩৭-১০ উড়োজাহাজে ধারাবাহিক বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে ১১৬টি আধুনিক উড়োজাহাজের মূল বহর তৈরির লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি বছরে গড়ে ৮.৫ শতাংশ হারে ৫০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

এছাড়া, গভীরতর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ১,১০০টিরও বেশি গন্তব্যে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট ও সংযোগ হাব হিসেবে মালয়েশিয়ার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।

রাজস্ব বৈচিত্রকরণ

যাত্রী পরিবহন ছাড়াও ‘লং-টার্ম বিজনেস প্ল্যান ৩.০’ পুরো এভিয়েশন ইকোসিস্টেম জুড়ে রাজস্ব বৈচিত্রকরণের ওপর জোর দেয়া হয়। ২০২৪ সালে নন-এয়ারলাইন আয় গ্রুপটির মোট আয়ের ১৮ শতাংশ ছিল যা রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল, কার্গো অপারেশন এবং ইন-ফ্লাইট ক্যাটারিং সেবার সম্প্রসারণে সহায়তা পেয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এভিয়েশন সেবায় তৃতীয় পক্ষের রাজস্ব ৬০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর পাশাপাশি মোট গ্রুপ রাজস্ব দ্বিগুণ করে ২৪ বিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিভা উন্নয়ন, কাঠামোবদ্ধ দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি এবং সেরা অপারেশনাল অনুশীলন গ্রহণের মাধ্যমে পরিচালন দক্ষতায় নেতৃত্ব আরও জোরদার করা হবে।

প্রকৃতপক্ষে মালয়েশিয়া এভিয়েশন গ্রুপের এই পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সকে বৈশ্বিক স্বীকৃতিসম্পন্ন একটি প্রিমিয়াম এশিয়া-প্যাসিফিক ক্যারিয়ার হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেছে।

বহর নবায়ন, শৃঙ্খলাবদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বহুমুখী রাজস্ব উৎস এবং উন্নত গ্রাহক অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গ্রুপটি আর্থিক পুনরুদ্ধারকে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা অর্জন করতে চায়। একইসাথে ২০৩০ সালের মধ্যে স্কাইট্র্যাক্স র‌্যাংকিংয়ে বিশে^র ১০টি সেরা এয়ারলাইন্সের তালিকায় নাম লেখাতে বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে এগুচ্ছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স।

অনন্যা ইফতিখার, ভ্রমণ ইন্টারন্যাশনালডেস্ক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!