
মুসলিম-বান্ধব পর্যটন বা বিশ্ব-হালাল টুরিজম বাজারকে বিবেচনা করে জার্মানি পর্যটনক্ষেত্রে নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে ‘জার্মানি হালাল ট্রাভেল গাইড’। ২৫ জুলাই গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল ২০২৫ এর অনুষ্ঠানে জার্মান ন্যাশনাল টুরিস্ট অফিসের পরিচালক ইয়ামিনা সোফো এটির উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে জার্মানি সারা বিশ্বের মুসলিম পর্যটকদের জন্য কৌশলগত দিক থেকে নি:সন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ এবং দেশটির পর্যটনের জন্য খুবই ইতিবাচক এক নতনু অধ্যায়ের সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে, জার্মানি অনেকটা নীরবে একটি উদার-পরস্পর সম্মানজনক মুক্ত ও বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। বিশ্ব পর্যটনক্ষেত্রে মুসলিম-বান্ধব পর্যটনের বাজার ক্রমেই শুধু যে বিশাল হচ্ছে তা নয়, এই বাজার অত্যন্ত টেকসইও বটে। ফলে বর্তমানে এশিয়া-ইউরোপ অঞ্চলের অমুসলিম প্রধান দেশগুলোও গুরুত্বের সাথে টুরিজমের এই ‘হালাল’ ট্রেন্ডকে গ্রহণ করে ‘হালাল টুরিজমকে’ প্রমোট করছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের হালাল টুরিজমের বিশ্ব বাজার মূল্য ছিলো ২৫৬.৫ বিলিয়ন ডলার, বিভিন্ন গবেষণা ও পূর্বাভাস বলছে ২০৩২ সালের মধ্যে এটি ৪১০.৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এখন শুধু মুসলিম প্রধান মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা তুরস্ক নয়, অমুসলিম প্রধান দেশ শ্রীলংকা, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, নিউ ইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশ এমএফটি তথা হালাল টুরিজমকে প্রচার করছে এবং হালাল টুরিজম ব্যবস্থাপনা সুবিধাদির সমন্বিত বন্দোবস্ত চালু করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে। জার্মানিও ‘হালাল ট্রাভেল গাইড’ চালু করে পর্যটনক্ষেত্রে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো। সত্যি বললে অন্তর্ভুক্তিমূল পর্যটনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো জার্মানি।
জার্মান ন্যাশনাল টুরিস্ট অফিসের পরিচালক ইয়ামিনা সোফোর উপস্থাপনার মূলে ছিল জার্মান ন্যাশনাল টুরিস্ট বোর্ড এবং হালালট্রিপ এর প্রকাশিত একটি ডিজিটাল গাইডলাইন, যেটি মুসলিম ভ্রমণকারীদের জন্য জার্মানিতে তাদের ভ্রমণকালকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এই ‘জার্মান হালাল ট্রাভেল গাইডে’র একটি আরবি সংস্করণ শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। বলাবাহুল্য, এই গাইডটি কেবল মুসলিম ভ্রমণকারীদেরকে জার্মানিতে স্বাগত জানানোর জন্যই নয় বরং তারা জার্মানিতে অবস্থানকালকে যেন আপন গৃহে থাকার অনুভূতি উপভোগ করেন সেজন্য বিস্তারিত উপস্থাপনা গাইডটিতে রয়েছে।
এই গাইডের মাধ্যমে ইউরোপের স্বল্প সংখ্যক গন্তব্যগুলোর মধ্যে জার্মানি সুদৃঢ় অবস্থানে পৌছেছে যারা কার্যকরভাবে মুসলিম-বান্ধব পর্যটনকে এমনভাবে একীভূত করেছে যেখানে যেকেউ সহজে এটি ব্যবহারের সুফল পাবেন। বিষয়বস্তুগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে করে ভ্রমণ পরিকল্পনা প্রক্রিয়া এতোটাই সহজভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যেন একইসাথে জার্মানির বিভিন্ন গন্তব্যে ঘোরাফেরা, নানা পরিষেবাগুলো সহজে পাওয়া এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলে ধরা হয়েছে।

‘জার্মান মুসলিম ট্রাভেল গাইড’টি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ যা মুসলিম ভ্রমণকারীদেরকে তাদের চাহিদা অনুযায়ি শুধু থাকবার বা ঘুরবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, তা নয়, বরং জার্মানি এমন একটি মুসলিম-পর্যটন-বান্ধব দেশ হিসাবে নিজেদেরকে তুলে ধরেছে যে জার্মান পর্যটন কতৃপক্ষ মুসলিম টুরিস্টদেরকে বিশেষ মূল্য দেয় এবং সম্মান করে। প্রকৃতপক্ষে এটি জার্মানিকে অন্বেষণ করার জন্য একটি ‘আমন্ত্রণপত্র’, যেন মুসলিম পর্যটকগণ আধুনিক এই দেশটিন অবকাঠামো এবং ভরপুর গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আবিস্কার করতে পারেন নিজের মতো করে।
সোফোর মতে, জার্মানি বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভ্রমণ বাজারকে কেবল একটি বাণিজ্যিক সুযোগ হিসেবেই বিবেচনা করে, তা নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যটনের ভবিষ্যতের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়। উপরন্তু এই কার্যক্রমের আরও তাৎপর্য রয়েছে। জার্মানির নিজস্ব মুসলিম জনসংখ্যা পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি। ‘জার্মানির হালাল ট্রাভেল গাইড’ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবা প্রদানকারী হিসাবে ভূমিকা রাখবে।
মুসলিম ভ্রমণকারীদের প্রত্যাশার সাথে পর্যটন কৌশলকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে জার্মানি এমন একটি বাজারের প্রতি সাড়া দিচ্ছে যাকে আর ‘বিশেষ’ বলে সীমাবদ্ধ করার সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাপী মুসলিম পর্যটকদের বিষয়টি বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্রময়; বহুবিধ বিষয়ের সাথে এটি ওতপ্রতভাবে সংযুক্ত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে তা নতুন নতুন মাত্রা পাচ্ছে; মুসলিম পর্যটকগণ এমন গন্তব্যস্থলের সন্ধান করছে যা তাদের মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে এবং সম্মান করে- এই সমস্তকিছুকে বিবেচনায় নিয়ে জার্মান পর্যটন কতৃপক্ষ ‘জার্মানি হালাল ট্রাভেল গাইড’ এর মাধ্যমে মুসলিম ফ্রেন্ডলি টুরিজম বিশ্ব তাদের পদযাত্র শুরু করলো। (সূত্র: বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও পেপারস)
খালিদ মোহাইমেন