
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রে ভরপুর জনপদ, সাংস্কৃতিক সম্পদ, শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চ্চার আধার এবং মানবিক ঔদার্যে ভররপুর এক দেশ আলজেরিয়া..
উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত আলজেরিয়াতে রয়েছে ৫৮টি প্রদেশ, ১,২০০ কিলোমিটার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলরেখা, পাশাপাশি সমভূমি, উচ্চ মালভূমি, পর্বতশ্রেণী এবং ২০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত বিশাল মরুভূমির বৈচিত্রময় ভূদৃশ্যের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে আলজেরিয়াতে যে কারও জন্য তা হতে পরে এক আকর্ষণীয় স্থান।
আলজেরিয়ার সরকারি ভাষা আরবি এবং তামাজাইট। ফরাসি এবং ইংরেজির মতো অন্যান্য ভাষাও তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রচলিত রয়েছে। ওয়ার্ল্ডমিটার-২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুয়ায়ি দেশটির জনসংখ্যা ৪৭,৩৮০, ৫৮৬ জন যার তাৎপর্যপূর্ণ অংশ তরুণ আলজেরিয়ান। সিংহভাগ মুসলিম জণগোষ্ঠি অধ্যুষিত এই আলজেরিয়ানদের রয়েছে বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পটভূমি। খেলাধুলা এবং শিল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ ব্যাপক, সমৃদ্ধ রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদার মানসিকতা, প্রাণবন্ত হাস্যরস এবং শক্তিশালী জাতীয় গৌরবের জন্য আলজেরিয়ানদের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বময়।

প্রফেসর কামেল বাদ্দারি, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা মন্ত্রী
আধুনিক আলজেরিয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সাহসী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশটির উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা মন্ত্রী প্রফেসর কামেল বাদ্দারি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের প্রতি আলজেরিয়ায় এসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য উদাত্ত ও আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য এই আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী কামেল বাদ্দারি বলেন, আপনি যদি চিকিৎসক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ অথবা একজন সংস্কৃতি গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, আলজেরিয়া আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষে ও সমাজে আপনাদের আগমন ও সরব উস্থিতি দেখতে মুখিয়ে আছি।
বর্তমানে আলজেরিয়ায় রয়েছে ১৩০টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ এবং সুনামের সাথে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডিগ্রি প্রদান করছে। প্রকৃতপক্ষে এই সকল সুবিধা নিয়ে দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রচার ও বিস্তারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
আলজেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, সাহিত্য ও শিল্পকলাসহ নানা বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ইংরেজি, ফরাসি এবং আরবি ভাষায় কোর্সগুলো পাঠদান করা হয়; তবে ভাষা নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট পাঠ্য-বিষয়ের উপর। রাজধানী আলজিয়ার্সের কাছে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি পোল অফ এক্সেলেন্স-এ পাঠদান সম্পূর্ণরূপে ইংরেজিতে চলমান রয়েছে যা আলজেরিয়ার আধুনিক শিক্ষাভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে বিশ্বমানের শিক্ষা পাবেন বহুবিধ সুবিধাদিসহ, যেমন সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার ব্যয়, নূন্যতম টিউশন ফি এবং সরকারি সহযোগিতা এই দেশে শিক্ষাকার্যক্রমকে দারুনভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়াও সহজ ও নমনীয় ভিসা প্রক্রিয়া, আবাসন, যাতায়াত, স্বাস্থ্যসেবা ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়সহ ব্যাপক সহায়তা পাবে আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ যা আলজেরিয়াতে পড়াশোনা করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আনন্দময়, সহজ ও উপভোগ্য করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে।

আরব, আফ্রিকান এবং ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতির সংযোগস্থল আলজেরিয়াতে রয়েছে অসংখ্য নুমিডিয়ান এবং রোমান স্থাপনা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত প্রাচীন রাজ্য নুমিডিয়া বা এর বাসিন্দাদের সাথে সম্পর্কিত নুমিডিয়ান রাজতন্ত্র বা নুমিডিয়ান শাসনকালকে নুমিডিয়ানরূপে আখ্যায়িত করা হয়।
শুধু শ্রেণিকক্ষেই নয়, আলজেরিয়াতে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে দেশটির সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ভা-ার যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আরও প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ হতে বড় ভূমিকা রাখছে।
উল্লেখ্য, আলজেরিয়তে রয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, যারমধ্যে তাসিলি, এন’আজ্জের, (তামানরাসেট এবং ইলিজি প্রদেশে), জেমিলা (সেতিফ প্রদেশে), মাজাব উপত্যকা (ঘারদাইয়া প্রদেশে), কাসবাহ (আলজিয়ার্সে), বেনি হাম্মাদ কালা (মাসিলা প্রদেশে), টিমগাদ (বাতনা প্রদেশে) এবং চেরচেল (টিপাজা প্রদেশে)।

তাসিলি

জেমিলা

মাজাব উপত্যকা
স্বাধীনতার পর থেকে আলজেরিয়াতে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবণ সম্পন্ন করেছেন। ৬২টি দেশ থেকে আগত এসকল শিক্ষার্থীরা মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবিক শাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ডিগ্রি লাভ করেছেন। ২০২৫ সালেও সরকার আধুনিক শিক্ষা ও উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম ওইঞওকঅজ, গড়ড়ফষব, ঋধনখধনং-এর মতো উদ্যোগে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে, বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী শক্তি বাড়াতে এধরণের বিশেষ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পোশাক শৈলী। ঐতিহাসিক নানা দিবস ও উৎসবসহ ধর্মীয় ছুটির দিন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সারাবছর ধরেই উদযাপন হতে থাকে, যা দেশটিকে উৎসবের এক প্রাণবন্তকেন্দ্ররূপে পরিচিতি দিয়েছে।
পোশাক শৈলী। ঐতিহাসিক নানা দিবস ও উৎসবসহ ধর্মীয় ছুটির দিন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সারাবছর ধরেই উদযাপন হতে থাকে, যা দেশটিকে উৎসবের এক প্রাণবন্তকেন্দ্ররূপে পরিচিতি দিয়েছে।
পৃথিবীর নানা দেশ থেকে পড়তে আসা নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা সুবিধা নিয়ে আলজেরিয়া অপেক্ষা করছে উষ্ণ আতিথেয়তা ও অমিত সম্ভাবনা নিয়ে।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। আবেদন করবার শেষ তারিখ ১০ আগস্ট ২০২৫। আবেদন করতে ভিজিট করুন: https://studyinalgeria.dz
মুহিব মনসুর এলাহী