বাংলাদেশ-রাশিয়া পর্যটন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত..

‘বাংলাদেশ-রাশিয়া পর্যটন সহযোগিতা-সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক একটি তাৎপর্যপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসে। ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাসের অধীনস্থ রাশিয়ান হাউস ট্রাভেল ম্যাগাজিন ‘ভ্রমণ’ এর সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গত ২৪ জুন, ২০২৫ তারিখে। রাশিয়ান হাউসের পরিচালক পি দভাইচেনকভ – এর শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনার সূত্রপাত হয়।

বাংলাদেশ রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে দুই পরীক্ষিত বন্ধু এবং এই বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও বহুমাত্রিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে দুই দেশের পর্যটন, যা পিপল টু পিপল কন্টাক্টের মাধ্যমে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও বৈচিত্রময় হবে বলে পরিচালক তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। একইসাথে তিনি দুই দেশের পর্যটন প্রচারে বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ভূমিকার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মতামত ব্যক্ত করেন। রাশিয়ার পর্যটন আকর্ষণগুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তেমনভাবে প্রচারিত হয়নি, এটি বেশি করে এবং আকর্ষণীয়ভাবে প্রচারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। রাশিয়ান হাউস আগামী দিনে বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার বহুমাত্রিক পর্যটন উন্নয়নে আরও জোরালোভাবে কাজ করবে বলে তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। ট্রাভেল ম্যাগাজিন ‘ভ্রমণ’ দির্ঘসময় ধরে রাশিয়ান হাউসের সাথে যে চমৎকার সম্পর্ক ও কার্যক্রম বজায় রেখে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে সেজন্য ‘ভ্রমণ’ ম্যাগাজিনের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন গ্লোবাল সাসটেইনেবল টুরিজম নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মো: আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ. কে. এম মনিরুজ্জামান, এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের সাবেক সিইও জাবেদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আবু তোয়াব মো: শাকির এবং ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম বিভাগের প্রধান সিদ্দিকুর রহমান।

অনুষ্ঠানে থীমনোট উপস্থাপন করেন টুরিজম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক আবু সুফিয়ান। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া এবং রাশিয়ান পর্যটন উভয়ই পৃথিবীর সফল পর্যটন এবং পর্যটন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রাশিয়া শুধু আয়তনের দিক থেকেই পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ নয়, এখানে রয়েছে বহু বৈচিত্র্যের সমাহার। ৮৫টি রিজিয়নে বিভক্ত দেশটির আয়তন কানাডার দ্বিগুণ, যেখানে রয়েছে ১১টি টাইমজোন। জনসংখ্যা ১৪ কোটির কিছু বেশি, যাদেরমধ্যে প্রায় ৪ কোটি মানুষ প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ২০২৪ সালে রাশিয়ান পর্যটকগণ বিদেশে ভ্রমণ বাবদ ব্যয় করেছেন ৩৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০২২ সালে যা ছিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ ৪৩ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়ান পর্যটকগণ ঝামেলাহীন ভ্রমণ গন্তব্যকে প্রাধান্য দেন। আবহাওয়ার দিক থেকে উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল তাদের অগ্রাধিকার।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ানদের পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা থাকায় তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে এশিয়া। ২০২৪ সালে ৬.২ মিলিয়ন রাশিয়ান তুরস্ক ভ্রমণ করেছেন; এরপরেই রয়েছে আরব আমিরাত, মিশর, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, জাপান প্রভৃতি দেশ। ইতোমধ্যে রাশিয়ার কিছু পর্যটক, ব্লগার বাংলাদেশে ঘুরে গেছেন এবং বাংলাদেশ তাদের পর্যটন গন্তব্য হতে পারে কি-না সেটি যাচাই করার চেষ্টা করেছেন এবং আশার কথা হলো রাশিয়ান পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ একটি দারুণ গন্তব্য হতে পারে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন। বিশেষভাবে প্রতিবছর ২০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মধ্যবিত্ত রাশিয়ান থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কিংবা অলিগার্চ সকলেই বিদেশ ভ্রমণ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপরিকল্পিত, নিরাপদ আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হলে দেশের পর্যটন অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে রাশিয়ান টুরিষ্টগণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০২২ সালের অস্থির শ্রীলংকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখেছে পর্যটন এবং সেই পর্যটনের অগ্রভাবে অবদান রেখেছে রাশিয়ান পর্যটকগণ। উপরন্তু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কল্যাণে অনেক রাশিয়ানের কাছেই বাংলাদেশ এখন একটি সুপরিচিত নাম। একইসাথে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে ৪.৬ মিলিয়ন পর্যটক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেড়াতে যান তাদের জন্য রাশিয়া হতে পারে এক অনবদ্য গন্তব্য যেখানে একইসাথে এশিয়া ও ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। ‘রিভিল ইউর ওঅন রাশিয়া’ অর্থাৎ ‘আপনার নিজস্ব রাশিয়াকে আবিস্কার করুন’-এই পর্যটন স্লোগানের মাধ্যমে রাশিয়া বিদেশি ভ্রমণকারীদেরকে দেশের বৈচিত্র্যময় এবং বহুমুখী পর্যটন আকর্ষণগুলো নিজের মতো করে আবিষ্কার করার জন্য নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এটি রাশিয়ার বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় ভূদৃশ্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের মধ্যে ব্যক্তিগত আবিষ্কার এবং অন্বেষণের ধারণার প্রতি বিশেষ জোর দেয় যেন পর্যটকগণ রাশিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।

আলোচনা পর্ব শেষে রাশিয়ান ডকুমেন্টারি ‘রাশিয়া: এন ইনসাইড আউটলুক’ সিরিজের ‘পিটারহক’ চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আয়োজিত বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন দর্শকগণ। গ্লোবাল এক্সপ্লোর এর সাইফ আলী খানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

ভ্রমণডেস্ক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!